তেজপাতার ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা - দাঁতের যত্নে তেজপাতার ব্যবহার
তেজপাতার ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা এবং দাঁতের যত্নে তেজপাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন। অনেকে আছে যারা তেজপাতার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে তেজপাতার উপকারিতার বিষয়ে জানব।
সুগন্ধিযুক্ত পাতা হল তেজপাতা। বিভিন্ন ধরনের খাবারের সুগন্ধ বাড়াতে সাহায্য করে তেজপাতা। তেজপাতা আবার ঔষধি হিসেবে পরিচিত। তেজপাতা চুলের যত্নে, ত্বকের যত্নে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ তেজপাতার ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা
- তেজপাতার ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা
- দাঁতের যত্নে তেজপাতার ব্যবহার
- ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারিতা
- চুলের জন্য তেজপাতার উপকারিতা
- তেজপাতার তেলের উপকারিতা
- তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা
- তেজপাতার বিড়ির উপকারিতা
- তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা
- তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
- পরিশেষে
তেজপাতার ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা
তেজপাতার ১৩ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন। তেজপাতা সুগন্ধিযুক্ত পাতা। তেজপাতা রান্নার স্বাদ বাড়াতে এবং সুগন্ধ বাড়াতে সাহায্য করে। তেজপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং কপার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং আয়রনের মত অনেক ধরনের লবণ। আসুন জেনে নেই তেজপাতার উপকারিতা।
- ক্যান্সার নিরাময়ের কাজ করেঃ ক্যান্সার নিরাময়ে তেজপাতা খুবই কার্যকরী। কেননা তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। তেজপাতা রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ক্যাটসিন উপাদান। এই উপাদান ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে এটি বেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী এবং এর বিরুদ্ধে কাজ করে।
- এসিডিটির সমস্যা কাজ করেঃ যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেশ উপকারী হল তেজপাতার চা। এসিডিটির সমস্যা নেই এরকম মানুষ খুবই কম। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এর জন্য খুবই উপকারী হল তেজপাতা। এসিডিটি নিরাময়ে তেজপাতা খুব ভালো ফল দেয়।
- গলা ব্যথায় কাজ করেঃ আমাদের অনেকেরই টনসিল এর সমস্যা রয়েছে। আর এই সমস্যা জেগে ওঠে বিশেষ করে শীতে। গলায় তীব্র ব্যথা হওয়া খুবই কষ্টকর। আর এই তেজপাতা আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যার ফলে আপনি পেতে পারেন আরাম ও স্বস্তি অতি তাড়াতাড়ি।
- কাশিতে ও গলা খুসখুশ নিরাময়ে কাজ করেঃ আমাদের অনেকেরই গলা খুসখুস এবং কাশি লেগে থাকে এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আপনাকে এক কাপ তেজপাতা চা খেতে হবে। আমাদের অনেকে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হই যার ফলে কাশির সমস্যা হয়। যার ফলে গলা খুসখুস করে তখন আপনি কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে নিয়ে সে পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে বুক মুছে নিতে পারেন এর ফলে আপনি তা থেকে আরাম পাবেন।
- ক্ষত নিরাময়ে কাজ করেঃ আমাদের শরীরের বাহ্যিক অংশে কাটা ছেঁড়া বা ক্ষত তৈরি হয় কোন কারনে। যার ফলে আমরা অনেক ব্যথা অনুভব করি। আর এই ক্ষত নিরাময়ে তেজপাতা দারুন কাজ করে। তেজপাতায়ে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এগুলো থাকার ফলে ক্ষত নিরাময় হয় অতি তাড়াতাড়ি।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ তেজপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট যার রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবার এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে দিনে দুইবার তেজপাতা খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে যায়। আবার তেজপাতার চা খাওয়ার ফলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বেরিয়ে যায়। যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন তাদের জন্য তেজপাতা খুবই উপকারী একটি উপাদান।
- দাঁত পরিষ্কার করতে কাজ করেঃ তেজপাতার গুঁড়া দাঁত পরিষ্কার রাখতে কাজ করে। যাদের চা, কফি এবং অ্যালকোহল সেবনের ফলে দাঁত হলুদ হয়ে যায়। তারা যদি তেজপাতার গুড়া দিয়ে যদি দাঁত মাজা বা ঘষা হয় তাহলে দাঁত অনেক পরিষ্কার হয় এবং সাদা হয়ে যায়।
- চুলের বৃদ্ধিতে ও চুলের নানা ধরনের সমস্যায় কাজ করেঃ চুলের বৃদ্ধি এবং চুলের খুশকির যারা ভুগছেন তাদের জন্য রয়েছে সুখবর। আপনারা জানলে অবাক হবেন যে তেজপাতা চুলের যত্নে খুবই উপকারী একটি উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা পানিতে সিদ্ধ করে নিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন ৩০ মিনিট তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুলের খুশকির সমস্যা দূর হবে এবং চুল বৃদ্ধি হবে।
- হজমের সমস্যায় কাজ করেঃ হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে তেজপাতা। তেজপাতা শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু সময় কিছু জটিল প্রোটিন সহজে হজম করতে পারেনা আর সেই সময় তেজপাতা তা হজমে সাহায্য করে। এছাড়া তেজপাতা পেটের সমস্যা সারাতে সাহায্য করে।
- কিডনির রোগ নিরাময়ে কাজ করেঃ কিডনিতে পাথর বা ইনফেকশন হলে তা নিরাময়ে তেজপাতা খুবই কার্যকরী। তেজপাতা শরীরের ইউরিয়ার পরিমাণ কমায় আর তাই শরীরের যদি ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে এটি কিডনির সমস্যা করে। এইজন্য আপনি তেজপাতা ও পানি গরম করে খেতে পারেন।
- ওজন কমাতে কাজ করেঃ অতিরিক্ত ওজন কমাতে তেজপাতা ব্যবহার রয়েছে। তেজপাতার সাথে কয়েক টুকরা আদা দিয়ে বানিয়ে ফুটিয়ে ফেলুন তারপর সে পানির সাথে মধ্যম মিশিয়ে পান করুন দিনে দুইবার। এর ফলে আপনার অতিরিক্ত ওজন কমবে।
- ত্বকের যত্নে ঃ ত্বকের যত্নে তেজপাতা ব ব্যবহারের ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও ব্রণ মুক্ত হয়। তেজপাতা ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আবার ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করে তেজপাতা।
- ব্যথা ও ফোলা কমাতে কাজ করেঃ ব্যথা ও ফোলা কমাতে তেজপাতা সাহায্য করে। তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে আর যে কোন ধরনের ব্যথা যেমনঃ মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, বাতের ব্যথা ভালো করতে কাজ করে।
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তেজপাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এবারে আমরা তেজপাতার অপকারিতা সম্পর্কে জানব। সব জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। ঠিক তেমনি তেজপাতার ও ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। তেজপাতা খুবই উপকারী ঔষধি পাতা। এ পাতা সেবনের ফলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি মেলে। আসুন জেনে নেই তেজপাতার অপকারিতা সম্পর্কে।
- যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের তেজপাতা ব্যবহার না করা উচিত। কেননা তেজপাতাতে রয়েছে এলার্জি জাতীয় উপাদান। সেজন্য তেজপাতা থেকে দূরে থাকায় উত্তম যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে।
- আবার যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তারা এটা এড়িয়ে চলতে পারেন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
- গর্ভাবস্থায় তেজপাতা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
- আবার যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারাও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তেজপাতা খাবে।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা তেজপাতা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। অতিরিক্ত তেজপাতা ব্যবহারের ফলে ব্লাড সুগারের নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটবে।
- যারা সার্জারির প্রেসেন্ট তাদের তেজপাতা সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- গর্ভবতী মহিলাদের তেজপাতা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা অতিরিক্ত তেজপাতা ব্যবহারের ফলে শিশুর সমস্যা হতে পারে।
দাঁতের যত্নে তেজপাতার ব্যবহার
দাঁতের যত্নে তেজপাতা খুবই উপকারী একটি উপাদান। দাঁতকে সাদা ও ঝকঝকে করে তুলতে আমরা নানা ধরনের দামি দামি টুথপেস্ট ব্যবহার করে থাকে কিন্তু তা থেকে সেরকম কোন উপকার মিলে না। তাই আর দেরি না করে ব্যবহার করুন তেজপাতা। প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার দাঁতকে সুন্দর করতে পারেন। জেনে নেয়া যাক দাঁত সাদা ও ঝকঝকে করার কিছু পদ্ধতি।
- তার সাদা ও ঝকঝকে করার জন্য প্রথমে কাঁচা বা শুকনো তেজপাতা নিতে হবে এবং এর সাথে টক ফল যেমনঃ কমলালেবু বা লেবুর খোসা নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে লেবু বা কমলালেবুর খোসা যেন শুকনো হয়। লেবুর খোসা শুকনো না হলে দাঁতের সমস্যা হতে পারে। এজন্য কখনোই কাঁচা খোসা ব্যবহার করা যাবে না।
- মাজন তৈরির জন্য প্রথমে ৪টি বা ৫টি তেজপাতা নিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এরপর তেজপাতা ও টক ফলের শুকনো খসা গুড়ো করে নিন। আর যদি আপনার মুখের দুর্গন্ধ বা মাড়িতে ব্যথার সমস্যা থাকে তাহলে আপনি এর সাথে লবঙ্গ যোগ করতে পারেন। সবগুলো দিয়ে গুঁড়ো করা হয়ে গেলে এর সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিন।
- এই মাজন ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনার করণীয় হচ্ছে এই পাউডারের মধ্যে অল্প পরিমাণ পানি মিশিয়ে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন দাঁত মাজতে পারেন। এই পাউডারটি প্রতিদিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। আবার এটি বেশি ব্যবহারের ফলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। আর ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহারের ফলে আপনি পেয়ে যাবেন সাদা ও ঝকঝকে দাঁত।
- আবার আপনি শুধু কাঁচা তেজপাতা দিয়ে দাঁত সাদা ও ঝকঝকে করতে পারেন। দাঁত ব্রাশ তো প্রতিদিনই করেন সেটা বাদ দিয়ে একদিন কাঁচা তেজপাতা দিয়ে দাঁত ঘষে দেখুন। তাহলে আপনার দাঁত উজ্জ্বল হবে। এই কাজটি আপনি মাঝেমধ্যেই করতে পারেন।
ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারিতা
ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারিতা শুধু যে প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রই যে তা কিন্তু নয় আধুনিক বিজ্ঞানেও একথা স্বীকার করেছে। তেজপাতার পাতা থেকে শুরু করে তার ডাল এবং তার বাকল ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে। তেজপাতা শুধু রান্নায় সুগন্ধি এবং স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এটি রূপচর্চায় ব্যবহার হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারিতা।
- ব্রণের সমস্যা থেকে সমাধান দেয় তেজপাতা। আমাদের অনেকেরই মুখে প্রতিনিয়ত ব্রণ বের হয়ে থাকে তাহলে সেই সমস্যা মেটানোর জন্য আপনি কয়েকটি তেজপাতা পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিন পানিটা ফুটানো হয়ে গেলে ছেকে নিন এবং হালকা কুসুম গরম হয়ে এলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। নিয়মিত পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার ফলে আপনার ব্রনের সমস্যা কমে যাবে।
- ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে তেজপাতা। ত্বকের যত্ন নিতে আমরা ব্যবহার করে থাকি বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট। তবে আপনার ঘরে থাকা তেজপাতা দিয়ে আপনি রূপচর্চা করতে পারেন। এটি ব্যবহারের ফলে আপনি মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক পাবেন। তেজপাতাতে রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ। যার ফলে বলিরেখা দূর হয়।
চুলের জন্য তেজপাতার উপকারিতা
চুলের জন্য তেজপাতার উপকারিতা নিয়ে কথা বলব। চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় তেজপাতা। যেমন ধরুন গরম গরম সময় চুলের গোড়ায় ঘাম বসে গিয়ে চুল পড়া এবং খুশকির মতো সমস্যা শুরু হয়। এক্ষেত্রে আপনার এই সমস্যা সমাধান দিতে পারে তেজপাতা। তেজপাতা ব্যবহার করা হয়। এটি সুগন্ধি বাড়ানোর সাথে সাথে এর নানা ধরনের গুণ রয়েছে।
চুলের যত্নে তেজপাতা জুড়ি মেলা ভার। আবার এটি ত্বকের যত্নে, দাঁতের যত্নে ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। এটি ঔষধি একটি পাতা। চুল পড়ার মতো বড় ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে এই তেজপাতা ব্যবহারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক চুলের জন্য তেজপাতার উপকারিতা।
- চুলের কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করে তেজপাতা। এজন্য শ্যাম্পু করার পর তেজপাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
- চুলের রুক্ষতা দূর করে।
- যাদের খুশকির সমস্যা রয়েছে তারা ব্যবহার করতে পারে তেজপাতা।
- চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে কাজ করে তেজপাতা। এজন্য আপনাকে তেজপাতা সেদ্ধ করা পানি ব্যবহার করতে হবে। এরপর আবার নরমাল পানি দিয়ে চুল ধরে নিতে হবে।
- চুল পরা বন্ধ করতে খুব দ্রুত কাজ করে তেজপাতা। তেজপাতার নির্যাস ব্যবহার করার ফলে খুব অল্প দিনেই চুল পড়া সমস্যা থেকে। কয়েকটি তেজপাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে তারপর পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন।
- চুল ঘন করতে সাহায্য করে তেজপাতা। চুল পড়ার ভয় আমাদের সকলেরই রয়েছে। দূষণের ফলে আমাদের চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে। আপনার চুল পড়ার সমস্যা কমার পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটির জন্য আপনাকে নারিকেল তেলের সাথে তেজপাতার গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে এরপর সেই মিশ্রণটি গরম করে নিতে হবে 5 মিনিট। এরপর ঠান্ডা হয়ে এলে তুলোর সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে।
তেজপাতার তেলের উপকারিতা
তেজপাতার তেলের উপকারিতা অনেক। তেজপাতা তেল ভারতীয় রান্নায় বিপুলভাবে ব্যবহার করা হয়। কেননা তেজপাতার রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটা বিভিন্ন ধরনের ব্যথায় ব্যবহৃত হয়। যেমন ধরুন বাতের ব্যথা, মাথাব্যথা গায়ের ব্যথা, গিঁটে গিঁটে ব্যথা ইত্যাদিতে। এই তেল ব্যথা সারানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
তেজপাতার তেল তৈরি করা হয় তেজপাতার গুঁড়ো ও অলিভ অয়েল তেল একসাথে মিশিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এটি একটি কাঁচের বোতলে ঢেলে অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে দুই সপ্তাহ। এর মধ্যে বোতলটি বেশি খোলাখুলি বা নাড়াচাড়া করা যাবে না শুধু মাঝে মাঝে ঝাকিয়ে নিতে হবে। দুই সপ্তাহ পরে তেলটির ছেঁকে নিয়ে একটি পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা জায়গায় রেখে দিতে হবে।
তেজপাতা তেল ব্যবহার করে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। তারমধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- আবার ত্বকের যে কোন সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয় তেজপাতার তেল।
- আবার তেজপাতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- যেকোনো ধরনের ব্যথা উপশমের কাজ করে তেজপাতা।
তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা
তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা প্রচুর। তেজপাতা ধোঁয়া নানা ধরনের সমস্যা থেকে সমাধান দেয়। তেজপাতা রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এটির ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক যুগ ধরে। আয়ুর্বেদে তেজপাতার অনেক ব্যবহার রয়েছে। পুষ্টিগুনে ভরপুর তেজপাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন সি ও এ এবং ফলিক এসিড ও বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর তেজপাতা।
তেজপাতা খাওয়ার ফলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরের মাত্রা এবং রোগ প্রতিরক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তেজপাতার ধোঁয়ার উপকারিতা অনেক। বুকে জমে থাকা কফ দূর করতে তেজপাতা ধোঁয়া খুবই উপকারী। তাই এরকম সমস্যায় পড়লে তেজপাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া হা করে মুখে টেনে নিন। এভাবে আপনি আরাম পাবেন।
আমাদের সকলের বাড়ির আশেপাশে পোকামাকড়ের দাপট অনেক। তাদের দাপট কমানোর জন্য তেজপাতার পুড়িয়ে তার ধোয়া আশেপাশে ছড়িয়ে দিন। এর ফলে বাতাস পরিশুদ্ধ হবে। মানসিক ক্লান্তি থেকে তেজ পাতার ধোঁয়া মুক্তি দিবে। তেজপাতা পুড়িয়ে সারা ঘরে এর ধোয়া ছড়িয়ে দিন। তেজপাতা তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিজেন শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী।
তেজ পাতার ধোঁয়া আপনার শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখতে খুবই কার্যকরী। তেজপাতার ধোয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। ডায়াবেটিস ঠিক রাখার পাশাপাশি অন্যান্য আরও অনেক রোগ ভালো করে তেজপাতার ধোঁয়া।
তেজপাতার বিড়ির উপকারিতা
তেজপাতার বিড়ি মানুষের জন্য খুবই উপকারী। মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে তেজপাতার বিড়ি। তেজপাতার বিড়ি খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা কাশি ও জ্বর এবং ফুসফুসে কাশি কমবে। এজন্য আপনি সকাল সন্ধ্যা খেতে পারেন তেজপাতা তৈরি করা। তেজপাতার বিড়ি কাশি কমানোর জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি।
তেজপাতার বিড়ি খুব সহজেই সর্দি কাশি বা শ্বাসকষ্ট সারিয়া তুলতে পারে। আবার আপনি যদি তেজপাতার বিড়ি না বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনি একটি পাত্রে পানি নিয়ে সেখানে ৫-৬ টি তেজপাতা ফুটিয়ে তা হালকা কুসুম গরম হলে খেতে পারেন। আবার আপনি একটা কাপড় সে পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে বুকে সেঁক দিতে পারক।
তেজপাতায়ে রয়েছে জৈব যৌগ যা পেটের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে। তেজপাতার বিড়ি শ্বাসকষ্ট এবং কাশি কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এজন্য আপনি তেজপাতা তৈরি সকল সন্ধ্যায় খেতে পারেন। তবে অবশ্যই তেজপাতা বিড়ি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। তাহলে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা
তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানব। তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি৬ এগুলোর মত ভিটামিন সমৃদ্ধ উপাদান। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তেজপাতা ভেজানো পানির মধ্যে তেজপাতার চাও পড়ে। তেজপাতার চা খেলে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তেজপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।
তেজপাতার পানি খাওয়ার ফলে দারুন উপকার মিলবে অক্সিডেন্ট যার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের ক্লান্তি দূর করতে তেজপাতার পানির উপকারিতা রয়েছে। তেজপাতা সেদ্ধ পানি খাওয়ার ফলে অনেক রোগের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব হয়। তেজপাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল নামক ক্ষতিকারক পদার্থের সঙ্গে লড়াই করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে তেজপাতার পান। তেজপাতার পানি খাওয়ার ফলে আমাদের খিদে কমে দেয় যার ফলে ওজন কমাতে সহজ হয়। তেজপাতার পানিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের কোচকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। তেজপাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি উপাদান। তেজপাতায় থাকা উপাতান গুলো শরীরের বিভিন্ন রকমের সমস্যা সমাধান করে থাকে। তেজপাতা একটি ভেষজ উপাদান। তেজপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম রাখতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তেজপাতা ভেজানো পানি খেতে পারেন। দুই থেকে তিনটি তেজপাতা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। যা অনেক রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন সকালে তেজপাতার চা খেলে আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকার হবে। কেননা তেজপাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর।
পরিশেষে
আজকে আর্টিকেলে তেজপাতা ১৩ টি উপকারিতা ও অপকারিতা এবং দাঁতের যত্নে তেজপাতা কিভাবে ব্যবহার করা হয় এবং তেজপাতার অন্যান্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তেজপাতা প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ একটি উপাদান। দাঁত ঝকঝকে করতে কিভাবে তেজপাতা ব্যবহার করা হয় ও বিভিন্ন রোগ সারাতে তেজপাতা কিভাবে খেতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করেছি।
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে তেজপাতার নানাবিদ ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে। ত্বক ও চুলের যত্নে তেজপাতা খুবই উপকারী একটি উপাদান। প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। আর লাইফ স্টাইল বিষয়ক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url