খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা - করলার জুস বানানোর নিয়ম

 

খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা এবং করলার জুস বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন। করলা একটি সবজি ও যার স্বাদ অনেক তেতো। করলা তেতো বলে আমরা অনেকেই এটা খেতে চাই না।

করলা ভিটামিন, বিটা ক্যারোটিনসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। করলার জুস শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। তাহলে চলুন জানা যাক খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা।

পোস্ট সূচিপত্রঃ করলার জস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে

খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কিন্তু করলা তেতো বলে আমরা অনেকে খেতে চাই না। করলা খেতে তেতো হলে এর উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না । কেননা করলার জুস মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই সবুজ রঙের সবজিটি খেতে ভালো লাগুক আর না লাগুক কিন্তু এর উপকারিতা অনেক।

করোলা একটি ঔষধি সবজি। এটি শরীরের অনেক সমস্যা সমাধানে কাজে আসে। করলাতে রয়েছে ভিটামিন সি, এ,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক এবং আয়রন। আমরা যদি করলা রান্না বা ভাজি করে খায় এর ফলে করলার পুষ্টিগুণ কমে যায়। এর চেয়ে সব থেকে ভালো হলো করলার জুস করে খাওয়া। এতে করে করলার পুষ্টিগুণ কমে যায় না।

করলার জুস খালি পেটে খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা এবং যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের সমস্যা ভালো হয়ে যায়। আবার যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও খালি পেটে করলা জুস খাওয়ার উপকারিতা আনে। আবার অনেকে যারা রয়েছেন যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য করলার জুস খুবই উপকারী। 

আবার যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে এবং যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের ক্ষেত্রে করলার জুস অনেক উপকারী একটি উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় এই করলার জুস। যারা ডায়াবেটিসের রোগী তারা প্রতিদিন করলার জুস ৩০ ml খেতে পারেন। আর যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের উচিত তাদের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে সে করলার জুস খাওয়া।

করলার জুস বানানোর নিয়ম

করলার জুস অনেক ভাবেই বানানো যায়। শুধু করলার জুস খেতে ভালো না লাগলে এতে মধু, লেবু, ধনেপাতা কুচি,  এবং কাঁচা মরিচ আরও অনেক কিছু যোগ করতে পারেন। যার ফলে করলার জুস খেতে ভালো লাগে। করলার জুস খালি পেটে খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেই করলার জুস কিভাবে বানায়।

করোলা সবজিটিকে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর করলা কে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। এবং এর ভিতরে থাকা বিচিগুলো বের করে ফেলে দিন। এরপর টুকরো টুকরো করলাগুলো ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে দিন। করলার রস থেকে নিয়ে এর সাথে পানি মিশিয়ে খেতে পারেন অথবা এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধু কিংবা লেবুর রস যুক্ত করে খেতে পারেন।

আবার টুকরো টুকরো করলার সাথে এতে কয়েকটি কাঁচা মরিচ এবং একটি লেবুর রস পুরোটাই দিতে হবে। এবং এর সাথে পরিমাণ মতো ধনে পাতা  এবং এর সাদ বাড়ানোর জন্য এতে কমলার রস, লবণ ও চিনি এবং তার সাথে পরিমাণ মতো পানি  দিয়ে সবগুলো একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এর পর এটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেলে গ্লাসে ঢেলে নিয়ে খেতে পারেন।

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

করলার উপকারিতা অনেক এবং এর গুনাগুনও অনেক। করলা কেউ পছন্দ করে আবার কেউ অপছন্দ করে না। করলা রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। করোলা অনেকভাবে খাওয়া যায় যেমনঃ ভাজি, ভর্তা, আবার মুচমুচে ভাজা করে রান্না আবার ডালের সঙ্গে করলার তরকারি ও চিংড়ি দিয়ে করলা ভাজি এবং আলু দিয়ে করলা ভাজি।

স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এ করলা। করলার ঔষধি গুণের কথা বলে তো শেষ করা যাবে না। কেননা নিয়মিত করলা খাওয়ার ফলে অনেক রোগ বালাই থেকে দূরে থাকা যায়। গরমের সময় করলা খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা করলা রাখা অতি জরুরী। চলুন জেনে নেওয়া যাক করলার উপকারিতা সম্পর্কে। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে করলার উপকারিতা অনেক। করলা রোগা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। করলা কোন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়াই করতে সাহায্য করে
  • খাবারের রুচি ফিরিয়ে আনেঃ অনেকের খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এর ফলে অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভোগার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। এর জন্য এক চামচ করলা রস সকাল ও বিকালে খেলে খাবারে রুচি ফিরে আসবে। 
  • বাতের ব্যথা নিরাময় করতেঃ বাতের ব্যথা নিরাময় করতে কাজ করে করলা পাতার রস। শরীর থেকে বাত ব্যথা তাড়ানোর জন্য চার চা চামচ করলা বা করোলা পাতার রস একটু গরম করে দেড় চামচ ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। এর ফলে বাতের ব্যথা নিরাময় হবে। 
  • ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেঃ ম্যালেরিয়া জন্য করলা পাতার রস খুব উপকার দিবে। ম্যালেরিয়া রোগী যদি দিনে তিনটি করলা পাতা এবং তিনটি আস্ত গোলমরিচ একসাথে মিশিয়ে থেতো করে এক সপ্তাহ খায় তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। করলা পাতার রস খাওয়ার ফলে  জ্বর ভালো হয়ে যায়।
  • হার্ট অ্যাটাক রোধেঃ হার্ট অ্যাটাক রোদেও করলার উপকারিতা রয়েছে। করলা রক্তে চর্বি অর্থাৎ ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, করলা প্রতিদিন খাবার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ হয়।
  • সুগার নিয়ন্ত্রণেঃ সুগার নিয়ন্ত্রণে করলা কাজ করে। করলাতে থাকা এডিনোসিন মন ফসফেট অ্যাক্টিভেটেড প্রোটিন কাইনেস নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে করলা খুবই উপকারী। করলায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়া করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধকারী লাইকো প্রোটিন। এর ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়।
  • হজম শক্তি ঠিক রাখতেঃ হজম শক্তি ঠিক রাখতে করলার বড় গুণ রয়েছে। করলা হজম করতে সাহায্য করে। কষ্ট কাঠিন্য দূর করতে করলার ভূমিকা রয়েছে। আবার পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা দূর করতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর হবে। 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও করলার ভূমিকা রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তের সুগার কমানোর উপাদান। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন করলা খেতে পারেন।
  • শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ করোনায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের দূষণ দূর করতে সাহায্য করে। এবং হজম প্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায় এ কলার রস থেকে। করলার রসের অনেক গুণ রয়েছে। যার ফলে অনেক কষ্টকাঠিন্য দূর হচ্ছে।
  • দৃষ্টির শক্তি ভালো রাখতেঃ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে করলার জুস খুবই উপকারী। করলার জুসে থাকা বিটা করোটিন, ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • কলেস্টরলের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রেঃ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে করলার ভূমিকা রয়েছে। করলার রসে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যার ফলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
  • ওজন কমানোর ক্ষেত্রেঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে করলার রসের অনেক উপকার রয়েছে। করলার রস ফ্যাটসেল বার্ন করে নতুন সেট তৈরিতে বাধা দান করে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
  • ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রেঃ ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে কলার রসের গুরুত্ব রয়েছে। করলার রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং এর পাশাপাশি চর্মরোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • শক্তিবর্ধক হিসেবেঃ শক্তিবর্ধক হিসেবে করলার রস কাজ করে। করলা স্ট্যামিনা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং এর পাশাপাশি ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
  • কৃমি দূর করতেঃ করলা পাতার রস খাওয়ার ফলে শরীর থেকে জ্বর চলে যায়। আবার কড়া পাতার রস খেলে শরীর থেকে কৃমি দূর হয়।
করলার যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে। বেশি কিছুই শরীরের জন্য কখনোই ভালো নয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক করলার অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য।
  • গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেঃ গর্ভবতী মহিলাদের করলা খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাধিক পরিমাণে তিতা করলা খেলে মাসিকের প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে গর্ভবতী মহিলার ক্ষতি হতে পারে। আবার গর্ভবতী মহিলারা খিচুনিতে আক্রান্ত হতে পারে এর ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী এবং উচ্চ রক্তচাপ সরকার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগী ঔষধ সেবন করে। এই ওষুধের সাথে তেতো কিছু খাওয়ার ফলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অতি জরুরী।
  • শিশুদের ক্ষেত্রেঃ শিশুদের করলা খাওয়ানোর ফলে শিশুদের পেটে ব্যথা হতে পারে এবং এর সাথে সাথে বমি ভাব পেট ফাঁপা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে এটা শিশুদের জন্য বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই শিশুদের করলা না খাওয়াই ভালো।
  • হৃদস্পন্দনের ক্ষেত্রেঃ নিয়মিত হার্টবিটের চলাচলকে অনিয়মিত করে দিতে পারে এই করলা। বিশেষ করে যারা কম বয়সী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয়। 

তিতা করলার উপকারিতা

অনেকের কাছে করলা খুবই প্রিয় সবজি। আবার অনেকের কাছে করলা প্রিয় সবজি নয়। এটি খেতে অনেক তেতো। সেজন্য ছোটরা এই সবজি খেতে তেমন পছন্দ করে না। এই সবজি পুষ্টিগুনে ভরপুর। করোলা উপকারিতা অনেক। এই সবজিটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক তিতা করলার উপকারিতা সম্পর্কে।
  • লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। 
  • বদহজম এবং এসিডিটির সমস্যা কমায়।
  • করলায় থাকা ডাইটারি ফাইবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুধা লাগতে দেয় না। এর ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
  • করলাতে থাকা না নাবিদ খনিজ এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান শরীরের জমে থাকা চর্বিকে ঝরিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • করলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরে রোদ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • এলার্জি সমস্যা দূর করে।
  • করেলায় থাকা এন্টি কার্সিনোজেনিক এবং এন্টি টিউমার উপাদান বেস্ট ক্যান্সার এবং সার্ভিকাল ক্যান্সার দূরে রাখতে সাহায্য করে। 
  • প্রতিদিন সকালে করলা খাওয়ার ফলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে।
  • প্রতিদিন কলা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • শরীর কামড়ানো, পানির পিপাসা বেড়ে যাওয়া এবং বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে করলা পাতার রস খেতে হবে।
  • করেলায় থাকা ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে করলা বাধ্য করছে কে রাখতে সাহায্য করে।
  • করলা রস খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা দূর হবে।
  • কোন জায়গায় কেটে গেলে বা ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখানে করলার শেখর বেটে লাগালে ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়।
  • পিত্ত থলিতে পাথর হলে করোলা রস খাওয়া যায়।
  • কানে ব্যথা হলে চার ফোঁটা করলার রস দিলে এর থেকে ব্যথার উপশম মেলে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে করলা।
  • খাবারের রুচি ফিরিয়ে আনতেও করলা বেশ উপকারী।

কাঁচা করলার উপকারিতা

প্রতিদিন ১০০ গ্রাম কাঁচা করলা খেলে মিলবে নানা উপকার। কেননা কলরতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম , ক্যালসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন এবং নানাবিধ উপকারী ভিটামিন এবং মিনারেল যা শরীরে প্রবেশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে ছোট বড় কোন রোগে ধারে কাছে ঘেষতে পারে না।

প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এই করলা। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে করলার উপকারিতা অনেক।  ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে এর ফলে ত্বক টানটান হয়ে থাকে। লিভারের সমস্যার ক্ষেত্রেও করলার ভূমিকা রয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এই করলা। পাইলসের সমস্যা দূরীকরণে করলার গুরুত্ব রয়েছে।

ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি দূর করতে সাহায্য করে এই করলা। করেলায় উপস্থিত কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার সেল যাতে জন্ম নিতে না পারে সেদিকে নজর রাখে ফলে এই মরণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। দৃষ্টিশক্তি উন্নতিতে কাঁচা করোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে আজ থেকেই কাঁচা করলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা

করলা একটি তেতো স্বাদ যুক্ত সবজি। করলা শরীরে নানাবিধ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক জুসের উপকারিতা সম্পর্কে।
  • কাঁচা করোলা জুস হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • করলার জুস ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • করলার জুস সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলার জুস উপকারী।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতায় বেশ কার্যকরী এই করলার জুস।
  • চুলের উজ্জ্বলতার ক্ষেত্রেও করলার জুস খুবই কার্যকারী।
  • করলার জুস এলার্জির সমস্যা দূর করে।
  • অ্যাজমা দূর করতে সাহায্য করে।
  • কিডনির সমস্যা দূর করতে পারে।
  • করলার জুস খাওয়ার ফলে চর্মরোগ সারিয়ে তোলা যায়।
  • করলার জুস ক্যান্সারের সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
তাহলে আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা করলার জুস রাখা অত্যন্ত জরুরী। আপনাদের খাদ্যের তালিকায় করলা রাখার ফলে আপনারা হয়ে উঠবেন সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের অধিকারী। প্রতিদিন করলার জুস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার এই অভ্যাসের ফলে করলা খাওয়ার উপকারিতা দেখতে পাবেন খুব শীঘ্রই।

 করলার জুস কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাহলে আমাদের এর পার্শপ্রতিক্রিয়ার ওপর ও খেয়াল রাখা জরুরী। আবার করোলা সাথে কিছু জিনিস আছে যেগুলো খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে সেগুলোর দিকেও আমাদের নজর রাখা অতি জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নেই করলার জুসের অপকারিতা সম্পর্কে।
  • একটা করলার জুস বানালে যতটুকু হয় প্রতিদিন ততটুকুই খাওয়া উচিত। এর বেশি খাওয়া উচিত নয়।
  • গর্ভাবস্থায় করলার জুস খাওয়া ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অতি জরুরী।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে করোলা জুস খাওয়া ভালো নয়। কেননা এতে শিশুদের পেটে ব্যথা এবং পেটের নানাবিধ সমস্যা ও বমি হতে পারে। এবং এর পাশাপাশি ডায়রিয়াও হতে পারে।
  • আবার প্রচুর পরিমাণে করলার জুস খেলে লিভারের প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
  • অধিক পরিমাণে করলা খেলে আবার ডায়রিয়া হতে পারে।
  • করলার জুস ক্যান্সারের সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

উচ্ছে পাতার উপকারিতা

এ পর্যায়ে আমরা উড়ছে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানব। কেননা করলার অনেক উপকারিতার কথা আমরা এ পর্যন্ত জেনে এসেছি। করলার পাতা রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। উচ্ছে পাতার রস নানা ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে পাতার রস। যারা প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করেন।  বা যাদের অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস রয়েছে।

 তাদের লিভার ড্যামেজ হলে সে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে এ উচ্ছে পাতার রস। কোথাও যদি কেটে বা ক্ষত হয়ে যায় তাহলে সেখানে উচ্ছে পাতার রস এর প্রলেপ লাগালে তাড়াতাড়ি ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়। তাছাড়া যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে ও বাতের ব্যথায় খুব অস্বস্তিতে রয়েছেন। তারা যদি নিয়মিত করলার রস খান তাহলে বাতের ব্যথা থেকে রেহাই পাবেন।

করলার জুস খেলে কি ওজন কমে

ওজন কমানোর জন্য আমরা অনেক কিছু করে থাকি। হয়তো কেউ ব্যায়াম অথবা ডায়েট মেনে চলে। আবার প্রতিদিন সকালে ও বিকালে হেঁটে। তারপরেও ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে না।  করলার জুস খেলে ওজন কমে। করলার জুস ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেক উপকারী। করলা রসে রয়েছে ফ্যাট সেল বার্ন যা নতুন সেট সেল তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে। 

যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। করলার জুস বানানোর জন্য প্রথমে একটি করলা পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে এবং বিচি গুলো ফেলে দিয়ে এর তেতো ভাব কমাতে লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার করলা গুলো তুলে নিয়ে ব্লেন্ডার জগে নিয়ে ব্লেন্ড করে ফেলতে হবে। তারপর জুসের পরিণাম মতো লবণ দিয়ে খেতে হবে। এটা আপনাদের ওজন কমাতে খুব উপকার করবে।

করলা খাওয়ার নিয়ম

করলা একটি তিক্ত সবজি। যা স্বাদে তেতো হলেও অনেকের কাছে আবার এটি প্রিয় সবজি। করলা নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আয়ুর্বেদের মতে, করলা একটি কৃমিনাশক, কফ নাশক ও পিত্ত নাশক এবং করলার জীবাণুনাশক ক্ষমতাও রয়েছে। করলা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। যার ফলে অনেক রোগের সমস্যার সমাধান মিলে। 

করলা অনেক ভাবে খাওয়া যায়। তাহলে জেনে নেই করলা কিভাবে খাওয়া যায়। করলাকে অনেকেই জুস বানিয়ে খায়। আবার কেউ করলাকে তরকারি বানিয়ে খায়। করলাকে ভাজি করে খাওয়া যায়। আবার করলার সাথে আলু মিশিয়ে তা ভেজে খাওয়া যায়। কেউ কেউ আবার চিংড়ি মাছ দিয়ে করলা রান্না করে খায়। আবার কেউ ডাল দিয়ে রান্না করে খায় করলা।

তবে কাঁচা করলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। করলার রস খাওয়া অনেক ভালো। কেননা কাচা করলায় এর পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে। যখন কাঁচা করলা রান্না ভাজি করার সময় তাপ প্রয়োগের কারণে করলার পুষ্টিগুণ একটু কমে যায়। সেজন্য করলার জুস বা করলার রস খাওয়া বেশি ভালো। তাহলে আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় করলা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শেষ মন্তব্য

খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা এবং জুস বানানোর নিয়ম সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। এ আর্টিকেলে করলার উপকারিতা অপকারিতা এবং করলা কিভাবে খেতে হয় এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। করলার অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের যত্নে করলা ব্যবহার করতে পারেন। 

প্রিয় পাঠক আজকের এই করলা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে যদি উপকৃত হন বা আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরকে সুস্থ থাকার সুযোগ করে দিন। এর ফলে আপনার বন্ধুরা উপকৃত হবে। বিভিন্ন রকমের লাইফ স্টাইল বিষয়ক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url