ড্রাগন ফলের ২০ টি উপকারিতা ও ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল

 

ড্রাগন ফলের ২০ টি উপকারিতা ও ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। ড্রাগন ফল খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই ফল বিভিন্ন রংয়ের হয়ে থাকে।

ড্রাগন ফল আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পারে।  আজকে আমরা জানবো ড্রাগন ফল এর উপকারিতা এবং ড্রাগন ফলের অপকারিতা ও এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে

ড্রাগন ফলের ২০ টি উপকারিতা

ড্রাগন ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের শাকসবজি ও ফল রাখা প্রয়োজন। তার মধ্যে একটি হল ড্রাগন ফল। এই ফলটি দুই রকমের হয়ে থাকে  যার ভেতরের অংশ সাদা ও লাল। দেখতে এবং খেতে খুব সুস্বাদু। এই ফলটি পুষ্টিগুণের দিক থেকে অনন্য। তাহলে জেনে নিন ড্রাগন ফলের ২০ টি উপকারিতা।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ড্রাগন ফলের ভূমিকা রয়েছে। আপনি যদি ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ড্রাগন যুক্ত করুন। কেননা ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবার চিনির মাত্রা কমিয়ে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। 
  •  হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করেঃ আমাদের শরীরের যত্ন নেওয়া একান্ত জরুরি। হাড় শরীরের একটি অংশ। হাড়ের সমস্যা দূর করতে ও মজবুত করতে ড্রাগন ফল খাওয়া অতি জরুরী। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। মহিলারা হাড়ের সমস্যায় বেশি ভোগে। যাদের এই সমস্যা তারা অধিক পরিমাণে ড্রাগন ফল খাবেন। এর ফলে হাড় মজবুত থাকবে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ মরণব্যাধি রোগ হল ক্যান্সার। এ রোগের নিস্তার নেই। তবে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত  খাবার আপনাকে রেডিকলস মুক্ত এবং ক্যান্সার উৎপাদনকারী উপাদান  হ্রাস করে। ক্যান্সারের  কমাতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। 
  • চুল পড়া প্রতিরোধেঃ চুল পড়া প্রতিরোধে ড্রাগন ফল চমৎকার কাজ করে। যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে। তাদের প্রতিদিন ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। কেননা ড্রাগন ফলে রয়েছে একটি চমৎকার এজেন্ট যা আপনার চুলকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে। আবার যাদের চুল পাকার সমস্যা রয়েছে তারাও প্রতিদিন ড্রাগন ফল খেতে পারেন। ড্রাগন ফলের রস ৩০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন। তারপর যে কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এর ফলে চুল সুস্থ থাকবে ও পাকা চুল রোধ হবে। 
  • রক্তশূন্যতাঃ যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারে এতে করে আপনার রক্তশূন্যতা রক্তশূন্যতা পূরণ করবে আপনার শরীর। আয়রনের মাধ্যম হলো রঙ্গিন ড্রাগন ফল। এর ফলে আপনি রক্তশূন্যতা দূর করতে পারবেন। সেজন্য প্রতিদিন ড্রাগন ফল খান।
  • পেশি সংকোচনঃ কোন খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে এবং আপনার পেশী সংকোচন এমনকি ডিএনএ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলিতে অংশ নিতে হয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের ফলে হৃদরোগ এবং স্ত্রোকের ঝুকি হ্রাস পায়। ম্যাগনেসিয়াম সম্পৃক্ত খাবার খেলে বেশি সংকট এবং হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • পেটের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রেঃ পেটের বিভিন্ন সমস্যার ড্রাগন ফলের ভূমিকা অনেক। ড্রাগন ফলের উচ্চফাইবার আপনার দেহের দৈনিক চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। নানা সমস্যা এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে প্রতিদিন উচ্চ ফাইবার খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং এর সাথে সাথে প্রচুর পানি খেতে হবে।
  • কিডনি সুস্থ রাখতেঃ কিডনি সুস্থ রাখতে বেগুনি ড্রাগন ফলের গুরুত্ব অনেক। বেগুনি ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে পটাশিয়াম। আর পটাশিয়াম কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর এর পাশাপাশি পাথর জমতে দেয় না। সেজন্য কিডনি সুস্থ রাখতে সুস্থ রাখতে বেগুনি ড্রাগন ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেঃ ড্রাগন ফলে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এজন্য আপনারা বেগুনি ড্রাগন ফল খেতে পারে। যার ফলে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে ও উন্নত হবে। এ বিটা সমৃদ্ধ ফলটি নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে ও ছানি পরার ঝুঁকি কমে যায়।
  • হার্টের ক্ষেত্রেঃ হার্টের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল প্রচুর উপকারী। হার্টের রোগীদের জন্য ড্রাগন ফল খাওয়া খুবই ভালো। কেননা ড্রাগনের মধ্যে এমন শক্তি আছে যা মানুষের পুরনো খারাপ কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমাতে পারে এবং নতুন করে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ভিজে রয়েছে ওমেগা থ্রি ওমেগা নাইন ফ্যাটিএসিড। এগুলো হার্টের জন্য খুবই উপকারী। 
  • ওজন কমানোর ক্ষেত্রেঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের চাহিদা অনেক। আপনি কি ওজন কমাতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে খুব কম পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। এর কারণে আপনার শরীরের চর্বি বাড়তে পারে না। এর ফলে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে দারুন ফল। 
  • হজমের ক্ষেত্রেঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ড্রাগন ফল খুবই উপকারী। আর ড্রাগন ফল প্রচুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার ফলে দুর্বল হজম শক্তিকে শক্তিশালী করে এবং মিলে কষ্ট কাঠিন্য থেকে রেহাই মিলে। শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে হলে বেশি বেশি ড্রাগন ফল খাওয়ার পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ ড্রাগন ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই আপনাদের খাদ্য তালিকা ড্রাগন ফল রাখতে পারে। এন্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি উৎস হলো ড্রাগন ফল। 
  • রক্ত চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করেঃ আমাদের সবার পরিচিত পুষ্টি ঘাটতি সমস্যা হল আয়রনের ঘাটতি। এই সমস্যা নারীদের মাঝে বেশী লক্ষ্য করা যায়। এজন্য আমরা বিভিন্ন খাবার খেয়ে যেমন মাছ মাংস বাদাম ও -ডাল জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। আবার কিছু ফলে উচ্চ পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হলো ড্রাগন ফল। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন অতি প্রয়োজন। যা শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে লোহিত রক্তকণিকাকে সাহায্য করে। 
  • কষ্ট কাঠিন্য প্রতিরোধেঃ কষ্টকাঠিন্য দূর করতে উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফলে ফাইবার থাকে। এটা অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সাহায্য করে। যাদের কষ্ট কাঠিনের সমস্যা রয়েছে তারা এ ফল খেলে উপকার পেতে পারেন। এটা বিভিন্নভাবে খেতে পারেন যেমন সালাদ হিসেবে। 
  • গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেঃ ড্রাগন ফলে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি। গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল হিসেবে বিবেচিত। নবজাতকদের জন্মগত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই ফল। ড্রাগন ফলে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী।
  • বার্ধক্যের বার্ধক্যের লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করেঃ অস্বাস্থ্যকর জীবন ধারা, চাপ, দূষণ এবং খারাপ খাদ্যের কারণে অকালে বার্ধক্যের সমস্যা এখন খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ড্রাগন ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করছে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ভাব ধরে রাখতে প্রতিদিন ড্রাগন ফলের জুস খেতে পারেন। এছাড়া ড্রাগন ফল চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। 
  • উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধঃ ড্রাগন ফল প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। আর এর ক্যালরি মাত্রাও তুলনামূলক অনেকটাই কম। 
  • ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রেঃ  ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের উপকারিতা রয়েছে। আপনার ত্বকে যদি ছিদ্র ছিদ্র  গর্ত থাকে। আর আপনি যদি গর্ত দূর করতে চান তাহলে প্রতিদিন  ড্রাগন ফল খান। আর ড্রাগন ফল থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক টানটান রাখে এবং তরলতা ভাব বজায় রাখে। রূপচর্চার কাজে ড্রাগন ফলে ভূমিকা অনেক রয়েছে।
  • রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেঃ আপনার রোদে পোড়া ত্বককে সুস্থ রাখতে ড্রাগন ফল খান। মুখের রোদে  পোড়া ত্বকের দাগ দূর করতে শসা, মধু ও ড্রাগন ফলের পুরো একসাথে বেটে নিয়ে মুখে লাগান। তাহলে রোদে পরা দাগ মিশে যাবে। আর ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন বি থ্রি ত্বকের রোদে আক্রান্ত স্থানকে ঠান্ডা করে।

ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল

ত্বকের যত্নে এই ফলে ব্যবহার অনেক ভাবেই করা যায়। আমাদের দেশে এখন ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।ড্রাগন ফলের সহজলভ্যতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ড্রাগন ফল ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মত পুষ্টি উপাদান দিয়ে থাকে। ড্রাগন ফল যেমন শরীরের জন্য খুবই উপকারী তেমনি ত্বকের জন্য উপকারী। এই ফল ত্বকের যত্নে ব্যবহার করলে অনেক উপকারিতা মিলবে।

  • মুখের বিভিন্ন ধরনের দাগ তুলতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। দীর্ঘদিন ত্বকের যত্নে এ ফল ব্যবহার করলে মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
  • ড্রাগন ফলটিতে ভিটামিন বি থ্রি রয়েছে যা রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। এছাড়া অতিবেগুনি রশির কারণে হওয়া প্রদাহ, লাল ভাব এবং চুলকানি থেকে পরিত্রান করে এই ফলটি।
  • ত্বকে মশ্চারাইজার রূপে ব্যবহার করতে পারেন এই ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলের হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বক নরম ও কমল থাকে।
  • ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি নিস্তেজ ত্বকে প্রাণ ফেরায়। করতে এই ফলের ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করা দরকার।
  • ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এই ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভাঙতে বাধা দেয় এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখে।
  • ড্রাগন ফল ত্বকের লালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এই ফলের প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এর ফলে ত্বকে প্রদাহ ও লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • ড্রাগন ফলের কয়েকটি টুকরোর পেস্ট বানিয়ে নিন। এবং একটি ছোট তুলার সাহায্যে ত্বকের দাগের ওপর লাগান। লাগানো হলে এক ঘন্টা রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে ব্রণ দূর হবে।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ড্রাগন ফলের খোসা প্রচুর উপকারিতা রয়েছে এবং এর পাশাপাশি এর ফলেরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমরা অনেক ধরনের ফল খেয়ে থাকি। আর এই ফল খাওয়ার পরে তাদের খোসা গুলো ফেলে দেই। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে আমরা যে খোশাগুলো ফেলে দিই সেগুলোর অনেক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে ড্রাগন ফলের খোসা একটি। 

ড্রাগন ফলের খোসা ত্বকে ব্যবহারের ফলে আমরা অনেক উপকৃত হই। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। একটা মুসলিম রস ও আধা চামচ চিনি মিশিয়ে মুখে ও ঘাড়ে কিছুক্ষণ লাগিয়ে ঘষাঘষি করার ফলে ত্বক নমনীয় হয় এবং কালো দাগ দূর হয়। আবার এর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। 

দুটি ড্রাগন ফলের খোসা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে অথবা থেত করে নিয়ে আড়াইশো গ্রাম ফুটন্ত পানিতে খোসা গুলো দিয়ে ৫ ৫ ১০ মিনিট মতো জ্বাল করে নিন। ধীরে ধীরে দেখবেন এর রং পরিবর্তন হয়ে এসেছে এবং এর বর্ণ দেখতে লাল হয়েছে। এরপর পানি ছেকে নিয়ে এর সাথে রেগুলার লবণ সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস মিশিয়ে সরবত তৈরি করে খেতে পারেন।

এভাবে যদি আপনি সব এক সপ্তাহ খান তাহলে আপনার যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা অতি সহজে দূর হয়ে যাবে। আবার আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন অথবা আপনার হৃদরোগ হয়ে  থাকে তাহলে এ শরবত খেলে অনেক উপকার সাধন করবেন। আবার এ শরবত আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

ড্রাগন ফলের খোসা ভিটামিন সি প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় ড্রাগন ফলের উপকারী। ড্রাগন ফল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রূপচর্চার কাজেও লাগে। ত্বকের যত্নে এই ফলের খোসার অনেক উপকার আছে। তবে আদ্রতা যোগ করে ত্বক নরম ও নমনীয় করে তোলে ড্রাগন ফল এর খোসা। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক নমনীয় থাকে।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

ড্রাগন ফল অনেকেই চিনেন। এটি সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু সবক্ষেত্রে উপকারী ফল হিসেবে পরিচিত।এটি খেতে অনেক সুস্বাদু। তবে যেমন ফল খেলে উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর উপকারিতা রয়েছে।সব ফলের খাওয়ার সঠিক সময় রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
ড্রাগন ফল খাওয়া অনেকভাবেই হয়ে থাকে। এটি জুস করে খেতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিয়ে জুস করে নিন। অথবা সালাত করেও আবার খেতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে আপনি সাধারণ ফলের মত কেটে ফেলেন খেতে পারেন। ফলটি রান্না না করে খাওয়াই ভালো।  তাপ প্রয়োগে ফলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।


ড্রাগন ফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। তবে প্রথমবার এটি খাওয়ার সময় একটু ভেবে নিতে হয় যে ফলটি কিভাবে কেটে খাওয়া যায়। এটা কেটে কেটে টুকরো করে খাওয়া যায়। তবে যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এটি সকালের নাস্তায় ছোট টুকরো করে এই টুকরোর ওপরে টক দই এবং বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। 

আবার  ফল খাওয়ার সঠিক সময় রয়েছেভোরবেলা অভুক্ত অবস্থায় এ ফল খেতে পারেন। এর ফলে ফলে থাকা সরল শর্করা ভালোভাবে শোষণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন।  তাই ভোরবেলা অবস্থায় অথবা দুটি আহারের মধ্যবর্তী সময় হলো ফল গ্রহণের উপযুক্ত সময়। এই অবস্থায়  বিভিন্ন প্রকার এন্ড টাইম খাদ্য পরিপাকে দ্রুত কাজ করে। 

দুই আহারে এর মধ্যবর্তী সময়ে অথবা অপুক্ত অবস্থায় ফল গ্রহণ করা হলে ফলের সব পুষ্টি উপাদান আঁশ ও সরল চিনি দেহে স্বদেশ পরিপাক হয় এবং ফল থেকে পাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। অবস্থায় ফল খেলে চুল পড়া, চোখের নিচের কালো দাগ এবং চুল পাকার সমস্যা দূর হয়। খাবারে ঠিক পরে ফল গ্রহণ করা ঠিক না। 

খাবার খাওয়ার পরপরই ফল খেলে ফল মুখ থেকে সরাসরি পাকস্থলীতে যাওয়ার পথে অন্য খাবার দিয়ে বাধাগ্রস্ত হলে খাবার পৌঁছে এসিড তৈরি হয় এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। সে জন্য খাবারের কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর ফল খাওয়া উচিত। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা বা দুই ঘন্টা পরে ফল খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

অনেক গর্ভবতী মহিলা রয়েছে যারা ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। এই ফলটি আপনার চাহিদা এবং গর্ভের ভ্রুনের জন্য পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। কেননা ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যা হজমে সাহায্য করে। নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি ক্যান্সারের সাহায্য করে। বর্তমানে বাংলাদেশের ড্রাগন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে অনেক উপকারী এ ড্রাগন ফল। এতে থাকা ভিটামিন বি, ফোলেট এবং আয়রন এগুলো গর্ভবতী নারীদের জন্য আদর্শ ফল। ভিটামিন বি এবংফোলেট নজাতকের জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম ব্রুনের হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য ড্রাগন ফল কতটা উপকারী এ প্রসঙ্গে নিষাদ শারমিন নিশি বলেন ড্রাগন ফল অবশ্যই ভালো নিরাপদ । গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রন ও ওমেগা 3 এর ঘাটতি পূরণের অনেক সময় ক্যাপসুল খেতে হয়। পরামর্শ দিয়ে থাকেন এই চিকিৎসক।

বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

বাচ্চাদেরকে শাক-সবজি খাওয়ার পাশাপাশি ড্রাগন ফল খাওয়াতে পারেন। ড্রাগন ফল ভিটামিন এ, বি১,বি২, বি৩, ওসি ওস্‌ আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের মতো অনেকগুলো, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান দ্বারা পূর্ণ। এগুলো ফাইবার সমৃদ্ধ যা অন্রে চলাচলে উন্নতি সাধন করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের ড্রাগন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।


  • ড্রাগন ফল অ্যান্টিঅক্সিজেন সমৃদ্ধ হওয়ায় এগুলো আপনার শিশুর কোষ গুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং দেহের ক্ষতি এরাতে সাহায্য করে। 
  • একটি খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ড্রাগন ফলের মধ্যে পুষ্টি থাকে যার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হাতের উন্নতি সাধন করে। এর ফলে শিশু সুস্থ হয়ে উঠবে এবং জীবনের শেষ পর্যায়ে হৃদরোগের সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।
  • শিশুর শক্তিশালী হাড় গঠনের সাহায্য করবে ড্রাগন ফল। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। এর ফলে ড্রাগন ফল হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এটি শৈশবের রিকেট এবং আর্থাইটিস এর মত রোগ থেকে দূরে রাখে। 
  • ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যার শরীরে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। ড্রাগন ফল হাড় , ড় পেশী ও ত্বকের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এবং রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতিতে প্রয়োজনীয়।
  • আপনার সন্তানের পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে ফাইবার প্রয়োজন। 
  • ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে আপনার শিশুর দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ করে তোলে।
  • ড্রাগন ফলের মধ্যে ফসফরাস, সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সামগ্রী স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম নিশ্চিত করে। 
  • ভিটামিন সি ত্বক তৈরি এবং মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুতরাং ড্রাগন ফল আপনার শিশু ত্বকের গঠন ও কোমলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
  • ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে কিডনি সুস্থ থাকে শিশুদের।

লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

ড্রাগন ফল দুই ধরনের হয়ে থাকে যেমন সাদা ও লাল। এ পর্যায়ে আমরা লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো।
  • লাল ড্রাগন ফল শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • শরীরের ভিটামিন খনিজ এবং প্রোটিনের প্রাকৃতিক উৎসব হিসেবে কাজ করে।
  • শরীরের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • ত্বকের স্বাস্থ্যের কমলতা ভাব ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

ড্রাগন ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চা

ড্রাগন ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের যত্ন  ড্রাগন ফলের খোসা অনেক উপকারী। ত্বকে আদ্রতা যোগ করে ত্বক নরম ও নমনীয় করে তোলে ড্রাগন ফলের খোসা। ড্রাগন ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক এবং নিয়াসিনেমাইড যা ব্রণ  দূর করতে সাহায্য করে। এটা ত্বকের লালচে ভাব ত্বকে থাকার দাগ দ্রুত সারাতে পারে। এর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ।

ড্রাগন ফলের ফেসপ্যাক

ড্রাগন ফল দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। আবার ড্রাগন ফলের খোসা দিয়েও ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। ড্রাগন ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এই পেস্টিতে কিছু বেসন, গোলাপজল এবং কাঁচা দুধ যোগ করে ফেলুন। খেয়ে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট ধরে। বিশ মিনিট হয়ে গেলে নরমাল পরিস্কার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।


আবার ড্রাগন ফল চটকে তোলার সাহায্যে সরাসরি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর দেখে নিন এর ফলাফল। আবার আরেকভাবেও ফেসপ্যাক তৈরি করা যায় ড্রাগন ফল কেটে টুকরো করে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিয়ে দাঁতের টক দই মিশিয়ে তোকে লাগিয়ে রাখুন।

ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক

সব জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। ড্রাগন ফলের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। ঠিক তেমনি ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয় রয়েছে। ড্রাগন ফল বেশি খাবার ফলে বাজে ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। ড্রাগন ফলেরঅনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন জানা যাক ড্রাগন ফলে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
  • অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • ড্রাগন ফলে রয়েছে হাইপ্রোটেশন আর এটা বেশি পরিমাণে খেলে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
  • আবার অনেক বেশি ড্রাগন ফল খেলে ডায়রিয়া হতে পারে
  • যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে থাকেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফল খাবেন।
  • কিছু কিছু মানুষের ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস ও বমির সমস্যা হতে পারে। 
  • ড্রাগন ফল খেলে কিছু মানুষের পাচনতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। যার ফলে পেট ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।

শেষ মন্তব্য

ড্রাগন ফল অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে নানা রকমের ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম থাকার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সক্ষম। তাই আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা ড্রাগন ফল রাখা অতি জরুরী। ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অনেক রোগ দূর হয়। আজকের এ আর্টিকেলে আপনাদের সামনে ড্রাগন ফলের ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

প্রিয় পাঠক আজকের এ আর্টিকেলে আপনাদেরকে ড্রাগন ফল বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছে। যদি এ আর্টিকেল পড়ে আপনারা উপকৃত হন তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং লাইফ স্টাইল বিষয়ক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আর এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url